প্রদীপ যেমন চারদিকে আলো প্রদান করে, তেমনি তার নিচের অংশটুকু সবসময়ই অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। ঠিক এমনভাবেই আম’রা সফল ব্যক্তিদের সফলতার গল্প শুনে পুলকিত হলেও তাঁদের জীবনের ক’ষ্টকর অধ্যায়গু’লো প্রায় সময়ই অজানা থেকে যায়।
আজকের প্রতিবেদনে গেইলের সফলতার গল্প নয়, বরং তাঁর শৈশবের ক’ষ্টকর দিনগু’লো স’ম্পর্কে কিছু কথা বলবো। ১৯৭৯ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর জ্যামাইকার কিংস্টনের এক বস্তিতে বসবাসকারী ‘হতদরি’দ্র পরিবারে ক্রিসট্রপার হে’নরি গেইলের জন্ম।
যাঁকে আম’রা চিনি ক্রিস গেইল নামে। ৬ ভাইবোনের মধ্যে গেইল তাঁর বাবা-মা’র পঞ্চম স’ন্তান। বাবা ডুডলি গেইল পেশায় একজন পু’লিশ ছিলেন। কিন্তু তিনি খুব কম পরিমাণ বেতন পেতেন। অসচ্ছলতা তাই সহজে তাঁদের পরিবারের পিছু ছাড়েনি। একারণে মা হে’নরি
গেইলকেও প্রতিবেশীদের দরজায়-দরজায় এবং পার্কে ঘুরে ঘুরে বাদাম এবং টুকিটাকি হাল্কা খাবার বিক্রি ক’রতে ‘হতো। এরকম দৈন্যদশার মধ্যে গেইল যে বিশ্বসেরা ক্রিকেটার হয়ে উঠবেন, সেটা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।
সবার ধারণা ছিল, তিনি প্রা’প্ত বয়স্ক হলে সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধ’রবেন অথবা ম’দের ব্যবসা করবেন কিংবা শ্র’মিকের কাজ করে সংসার চালাবেন। কিন্তু তাঁর ভাগ্যের লিখনটা অন্যরকমই ছিল। গেইল এখন যেমন দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান, ছোটবেলাতেও তেমনি দুরন্ত এক শি’শু ছিলেন।
দারিদ্রতার জন্য তিনবেলা ঠিকমতো খাবার না পেলেও নিয়ম করে ঠিকই মা’র খেতেন তিনি। সবচেয়ে বেশি উত্তম-মধ্যম খেতে ‘হতো মায়ের হাতে। কারণটাও বেশ স’ঙ্গত ছিল। স্কুল পালানো, সারাদিন এখানে-ওখানে টইটই করে বেড়ানো, সমবয়সীদের স’’ঙ্গে মা’রপিট করা – এসব ব্যাপারে ওস্তাদ ছিলেন গেইল।
তাছাড়া খেতে বসলেও অনেক সময় খাবার নিয়ে জেদ ক’রতেন তিনি। তাই তাঁর মা-ও তাঁকে বেশ কড়া শাসন ক’রতেন। এসবের মধ্যে তাহলে কিভাবে ক্রিকে’টের স’’ঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন গেইল? এজন্য গেইল সবসময়ই কৃতজ্ঞতা প্র’কাশ করেন লোকাস ক্রিকেট ক্লাবের প্রতি। এই ক্লাবটিই গেইলের প্রতিভা দেখে তাঁকে ও’পরের দিকে উঠিয়ে তুলেছিল।
ক্লাবটিতে খেলার সময় থেকেই বিধ্বং’সী ব্যাটিং ক’রতে শুরু করেন তিনি। একটা সময় তাঁর ব্যাটিং জ্যামাইকান নির্বাচকদেরও ভালো লে’গে যায়। তাঁরা তখন উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডকে খবর দেন যে জ্যামাইকা থেকে তাঁরা নতুন বিধ্বং’সী ক্রিকেটার পাঠাচ্ছেন৷
ক্রিকেট বোর্ড যাব’তীয় যাচাই-বাছাই শেষে তাঁকে তখন অনুর্ধ্ব-১৯ দলের জন্য মনোনীত করে। সেখানেও চমক দেখানো গেইল পরে ১৯৯৯ সালে সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় দলে। এরপর থেকে মেরুন জার্সি গায়ে একের পর এক রেকর্ড গড়তে থাকেন তিনি।
২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টিতে অ’ভিষেকের পর থেকে গত ১৪ বছরে সবধ’রনের টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে করেছেন রেকর্ড সর্বোচ্চ ২০টি সেঞ্চু’রি। তাছাড়া ফর্ম্যাটটিতে সর্বোচ্চ ব্য’ক্তিগত রান, সর্বোচ্চ বাউন্ডারি, দ্রততম সেঞ্চু’রি – ইত্যাদি সব রেকর্ডই এখন তাঁরই দ’খলে।
ভক্তরা তাই প্রায়শ ডাকেন ‘দ্য কিং অব টি-টোয়েন্টি’ নামে। ছোটবেলায় তিনবেলা ঠিকমতো পেট ভরে খেতে না পারা ছেলেটিই আজ ৪০ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক। কিন্তু শৈশবের সেসব ক’ষ্টকর দিনের কথা গেইল আজো ভু’লতে পারেননি। তাই তো ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিজস্ব অর্থায়নে তাঁরই মতো ‘হতদরি’দ্র কিশোর-যুবকদের জন্য গড়েছেন ‘দ্য ক্রিস গেইল একাডেমি’।