
বি’ভ্রান্তিকর ও অবৈজ্ঞানিক ভিডিও কনটেন্ট অনলাইন থেকে না সরালে তার বি’রুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এক চিঠিতে জানায় এফডিএসআর
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে পরিচিতি পাওয়া ডা. জাহাঙ্গীর কবির করো’নাভা’ইরাসের টিকা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়ার ঘটনায় ক্ষমা চেয়ে অনলাইন থেকে এ সংক্রান্ত ভিডিও সরিয়ে নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব ভেরিফায়েড পেজে তিনি ক্ষমা চান। এর আগে চিকিৎসকদের বি’রুদ্ধে বিষোদগারের জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং
ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের বি’ভ্রান্তিকর ও অবৈজ্ঞানিক ভিডিও কনটেন্ট অনলাইন থেকে না সরালে তার বি’রুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এক চিঠির মাধ্যমে জানায় চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিটিলিস (এফডিএসআর)।
করো’নাভা’ইরাসে টিকা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ডা. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, “করোনার ভ্যাকসিন বিষয়ে কিছু তথ্য সহজভাবে বোঝাতে গিয়ে আমা’র অসাবধানতা বশত ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম।
এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে আমি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ভিডিওতে যে তথ্যগুলো ভুল ছিল এবং যে কথাগুলো জনমনে বি’ভ্রান্তি ছড়াতে পারে সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে পূর্বের ভিডিওটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নিয়েছি। একইসঙ্গে সবাইকে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য পরামর্শ এবং উৎসাহ দিয়েছি।”
ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধ’রা হলো-
আসসালামু আলাইকুম, আমি ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর। সুস্থ থাকার লক্ষ্যে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা নিয়ে কাজ করছি। সেই লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন ধরে আমা’র রোগীদের লা’ইফস্টাইল মডিফিকেশনের পরামর্শ দিয়ে আসছি।
ইদানিংকালে আমা’র একটি ভিডিও এবং দুটি পোস্ট নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত সুস্থ থাকার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে আমি একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলাম,
সেখানে করোনার ভ্যাকসিন বিষয়ে কিছু তথ্য সহজভাবে বোঝাতে গিয়ে আমা’র অসাবধানতা বশত ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম। এ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে আমি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ভিডিওতে যে তথ্যগুলো ভুল ছিল এবং যে কথাগুলো জনমনে বি’ভ্রান্তি ছড়াতে পারে সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে পূর্বের ভিডিওটি অনলাইন থেকে সরিয়ে নিয়েছি।
একইসঙ্গে সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য পরামর্শ এবং উৎসাহ দিয়েছি। এরপরেও কয়েকজন সম্মানিত ডাক্তার আমাকে ভুল বুঝে সরাসরি আমা’র নাম উল্লেখ করে নানান রকম পোস্ট করেন। তন্মধ্যে একটি পোস্টের স্ক্রিনশট আমি আমা’র পেজে শেয়ার করেছিলাম।
এছাড়া অন্য একটি জনসচেতনতামূলক পোস্টে উদাহরণ স্বরুপ একটি প্রেসক্রিপশন শেয়ার করেছিলাম। ওই প্রেসক্রিপশনটি যিনি লিখেছিলেন তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আমি তার নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি প্রকাশ করিনি।
তথাপি এই পোস্টটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে তৎক্ষণাৎ দুটি পোস্টই ডিলিট করে দেই। আমি বিশ্বাস করি, আমা’দের ডাক্তার সমাজের প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসেবা করে যাচ্ছেন, মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন,
এজন্য প্রত্যেক ডাক্তারই আমা’র কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন। একজন ডাক্তার হিসেবে আমি কখনোই কাউকে অসম্মান করতে পারি না এবং আমি তা করতে চাইও না। তবুও আমা’র অন্বিচ্ছায় তা হয়ে থাকলে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর বাইরে আরও যে বিষয়ে সমালোচনা এসেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো, আমা’র পরামর্শকে কিটো ডায়েট হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমি বহুবার নানান ভিডিওর মাধ্যমে বলেছি যে আমি শুধুমাত্র ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কথা বলি না। আমি মূলত পাঁচটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি অটোফেজি, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক প্রশান্তির চর্চা করাকে সমানভাবে গুরুত্ব দেই। আমি কখনোই ঔষধ বিরোধী না, আমি সব সময় বলে এসেছি জরুরি চিকিৎসায় ঔষধ অ’পরিহার্য। তবে লা’ইফস্টাইল রোগগুলো লা’ইফিস্টাইল মডিফাই করে প্রতিরোধ করা যেতে পারে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমিও আমা’র রোগীদের প্রয়োজনে ঔষধ লিখছি, সুতরাং ঔষধের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি যেন স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ঔষধ ছাড়া সুস্থ থাকতে পারেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যেসব রোগীরা সরাসরি আমা’র পরামর্শ নেন আমি তাদের নিয়মিত অবজারবেশনে রাখার চেষ্টা করি এবং কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে আমা’র পরামর্শের নানান প্রভাব ও প্রতিকারের বিষয়ে আলোকপাত করে থাকি।
সর্বোপরি আমি মনে করি চিকিৎসক সমাজে আম'রা সবাই সহকর্মী, একে অ’পরের সহযোগী। এখানে রয়েছেন আমা’র সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা, শ্রদ্ধাভাজন বড় ভাই-বোন, বন্ধুরা ও আগামীর সম্ভাবনাময় জুনিয়র ডাক্তাররা। জনস্বার্থে সব চিকিৎসকই একেকজন যোদ্ধা। করোনা মহামারির এ চরম দুর্দিনে ডাক্তারদের মত যোদ্ধারাই নিজেদের জীবন ঝুঁকির কথা ভুলে জরাগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকেছে এখনো আছে। আজকের পুরো বিশ্ব চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি সকলের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে, তাই আপনারা আমা’র কোনো ভুল ধরিয়ে দিলে আমি তা শুধরে নেব। নিজের ভুলকে আমি ভুল হিসেবে গ্রহণ করে তা শুধরে নেব, আর আপনাদের কাছেও আমা’র অনুরোধ আপনারা আমা’র পূর্বের ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেননা আম'রা তো সকলে মিলে মানব সেবার ব্রতেই চিকিৎসা পেশাকে বেছে নিয়েছি আর সেজন্য আম'রা একে অ’পরের প্রতি সম্মান রেখে একযোগে কাজ করতে পারি।
আমি নিজেও একজন চিকিৎসক, সবসময়ই প্রত্যেক চিকিৎসকের সম্মান রক্ষা ও অবদান স্বীকার আমা’র কাছে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। বহু আগে থেকেই আমি নিজেও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা, অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে সোচ্চার আছি। সেই লক্ষ্যে আমি ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিস (এফডিএসআর) এর সঙ্গে প্রোগ্রাম করেছিলাম, তা আমা’র পেজ থেকে শেয়ার করেছিলাম সকলের উদ্দেশে। তবুও মানুষ হিসেবে আমি ভুলের ঊর্ধ্বে নই। তাই আমা’র কথায় হয়তো অনেক সহকর্মী- সিনিয়র চিকিৎসক কষ্ট পেয়েছেন কিংবা মনক্ষুণ্ন হয়েছেন। আমি তাদের সবার প্রতি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।