এক বছরেরও বেশি সময়ের জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল দেশটি। আর মাত্র তো একটি দিন। এরপরই মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারবে দেশের জনগন; কিন্তু সেটা আর বুঝি হচ্ছে না! প্রাণঘাতি ভা’ইরাস ইবোলার সংক্রমণ আবারও দেখা দিয়েছে আফ্রিকান দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। ফলে, দেশটিতে জরুরি অবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।






গত শুক্রবারই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছিল, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর বেনি শহরে নতুন করে এক ব্যক্তির শরীরে ইবোলা ভা’ইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। হু’র ডিরেক্টর জেনারেল ড. তেদ্রস আধানম গেব্রেয়েসুস বলেন, ‘আম'রা যে ধারণা করেছিলাম, তেমন কোনো ভালো সংবাদ দিতে পারছি না। আম'রা এখনও বেনি এবং তার আশপাশে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে এখনও নজরদারির মধ্যে রাখতে হচ্ছে (অর্থ্যাৎ, লকডাইনের সময়সীমা বাড়ানো হবে)।’






আল জাজিরার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বেনি হচ্ছে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় শহর। যেটা ইবোলা মহামারির মূল কেন্দ্র। যে রোগির শরীরে ইবোলার অস্তিত্ব মিলেছে, বৃহস্পতিবার সকালেই তিনি মৃ’ত্যুবরণ করেণ। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই ইবোলার উপসর্গ নিয়ে তিনি হাসপাতা’লে ভর্তি ছিলেন। পরে তার দেশের নমুনা পরীক্ষা করে ইবোলা সংক্রমিত বলে নিশ্চিত করা হয়।






কঙ্গোর ইবোলা মহামারি সম্পর্কে গঠিত মাল্টিসেক্টরাল কমিটি তাদের বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে মৃ'ত ব্যক্তি ২৬ বছর বয়সী, বেনি অঞ্চলের বাসিন্দা। আমা’দের টিম এ নিয়ে হু’কে সহযোগিতা করছে। তারাই এখন এ নিয়ে এখানকার মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে। ত’দন্ত করে দেখবে, ইবোলার সংক্রমণ নতুন করে আর ঘটেছে কি না, কিংবা কি অবস্থা এই পরিস্থিতির। এরপরই তারা জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় অ্যাকশনে যাবে।’






ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখের পর কঙ্গোয় নতুন কোনো ইবোলা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। যার ফলে দেশটি প্রস্তুতি নিচ্ছিল, টানা এক বছরের আউটব্রেক থেকে মুক্তি মিলবে তাদের। কিন্তু সেটা আবারও থমকে গেলো।






২০১৮ সালের আগস্টে দেশটিতে ইবোলা ভা’ইরাস হানা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী এরপর থেকে এখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এই ভা’ইরাসে। তবে মৃ’ত্যুবরণ করেছে ২ হাজার ২০০ মানুষ।






বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল টুইটারে পোস্ট করা তথ্যে জানান, ‘৫২ দিন কঙ্গোয় কোনো ইবোলা রোগি পাওয়া যায়নি। সার্ভেইলেন্স অ্যান্ড রেসপন্স টিম কঙ্গোয় নতুন করে একজন ইবোলা আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছে। আম'রা এখন আরও নতুন নতুন সংক্রমণ হতে পারে- এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।’






তিনি একই সঙ্গে এটাও বলে দিয়েছেন যে, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে কঙ্গো সরকার এখনই এই প্রাণঘাতি ভা’ইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছে মর্মে ঘোষণা দিতে পারছে না। তবে, হু সব সময়ই মাঠে রয়েছে এবং দেশটির সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যাতে করে সংক্রমিত এলাকা এবং আমা’দের পার্টনার (সরকার) দ্রুতই এই মহামারি শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা দিতে পারে।’






স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘লাইসেন্সছাড়া ঔষধ কিংবা ভ্যাকসিন এবং টেস্ট কিট ব্যবহারের কারণেই হয়তো বা দেশটিতে আবারও ইবোলা ফিরে এসে থাকতে পারে।’






বিশ্বব্যাপি যখন করো’নাভা’ইরাসের বি’রুদ্ধে লড়াই করছে, তখন কঙ্গোয় ইবোলার নতুন করে সংক্রমণ উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। কঙ্গোয় এখনও পর্যন্ত করো’নাভা’ইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৪ জন। এর মধ্যে মৃ’ত্যুবরণ করেছেন ২০ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৬ জন।





